কর্মধারায় সমাস


কর্মধারায় সমাসঃ যে সমাসে পূর্বপদ পরপদের বিশেষণ-রূপে অবস্থান করে এবং উত্তরপদের অর্থ প্রধান রূপে প্রতীয়মান হয় তাকে কর্মধারায় সমাস বলে। এই সমাসে উভয় পদে কর্তৃকারকে শূন্য বিভক্তি হয়।
কর্মধারায় সমাসের শ্রেণীবিভাগঃ কর্মধারায় সমাস পাঁচ প্রকারের৷
যথাঃ সাধারণ কর্মধারায়, মধ্যপদলোপী কর্মধারায়, উপমান কর্মধারায়, উপমিত কর্মধারায় এবং রূপক কর্মধারায় সমাস।
১। সাধারণ কর্মধারায় সমাসঃ সাধারণ কর্মধারায় সমাসের তিনটি শ্রেণী -
বিশেষণ + বিশেষ্য (পূর্বপদ বিশেষণ এবং পরপদ বিশেষ্য)
উদাহারণঃ
মহাজন = মহৎ যে জন
নীলোত্পঃল = নীল যে উত্পবল
সৎ লোক = সৎ যে লোক
রক্তকমল = রক্ত যে কমল
পান্ডুলিপি = পান্ডু যে লিপি
সুন্দরলতা = সুন্দরী যে লতা
মহাকীর্তি = মহতী যে কীর্তি
মহানবী = মহান যে নবী
কদর্থ = কু যে অর্থ
কদাচার = কু যে আচার
নরাধম = অধম যে নর
আলুসিদ্ধ = সিদ্ধ যে আলু
প্রিয়সখা = প্রিয় যে সখা
সুখবর = সু যে খবর
শ্বেতবস্ত্র = শ্বেত যে বস্ত্র
মন্দভাগ্য = মন্দ যে ভাগ্য
মহারাজ = মহান যে রাজা
বিশেষ্য + বিশেষ্য (উভয়পদ বিশেষ্য)
উদাহারণঃ
রাজর্ষি = যিনি রাজা তিনি ঋষি
পিতৃদেব = যিনি পিতা তিনি দেব
ব্রাহ্মণপণ্ডিত = যিনি ব্রাহ্মণ তিনি
দেবর্ষি = যিনি দেব তিনি ঋষি
শিবনাথ = যিনি শিব তিনি নাথ
কারুশিল্পী = যিনি কারু তিনি শিল্পী
শশীবাবু = যিনি শশী তিনি বাবু
নৃপশিষ্য = যিনি নৃপ তিনি শিষ্য
মা-ঠাকুরুন = যিনি মা তিনি ঠাকুরুন
ঠানদিদি = যিনি ঠান তিনি দিদি
ঋষিকবি = যিনি ঋষি তিনি কবি
গুরুদেব = যিনি গুরু তিনি দেব
মাতৃদেবী = যিনি মাতৃ তিনি দেবী
ঠাকুরদাদা = যিনি ঠাকুর তিনি দাদা
মৌলবীসাহেব = যিনি মৌলবী তিনি সাহেব
দারোগাবাবু = যিনি দারোগা তিনি বাবু
লাটসাহেব = যিনি লাট তিনি সাহেব
বিশেষণ + বিশেষণ (উভয়পদ বিশেষণ)
উদাহারণঃ
গণ্যমান্য = যিনি গণ্য তিনি মান্য
মৃদুমন্দ = যাহা মৃদু তাহাই মন্দ
কাঁচামিঠে = কাঁচা অথচ মিঠে
শীতোষ্ণ = শীত যেখানে উষ্ণও সেখানে
শান্তশিষ্ট = যে শান্ত সেই শিষ্ট
স্নাতানুলিপ্ত = পূর্বে স্নাত পরে অনুলিপ্ত
নীললোহিত = নীল অথচ লোহিত
২। মধ্যপদলোপী কর্মধারায়ঃ যে কর্মধারায় সমাসে ব্যাসবাক্যের মধ্যপদের লোপ হয় তাকে মধ্যপদলোপী কর্মধারায় সমাস বলে ।
উদাহারণঃ
রান্নাঘর = রান্না করার ঘর
পলান্ন = পল(মাংস) মিশ্রিত অন্ন
সাহিত্যসভা = সাহিত্য বিষয়ক সভা
জনসভা = জনগণ বিষয়ক সভা
স্মৃতিসৌধ = স্মৃতি রক্ষার্থে সৌধ
ঘরজামাই = ঘরে আশ্রিত জামাই
সংবাদপত্র = সংবাদ বহনকারী পত্র
মৌমাছি = মৌ আশ্রিত মাছি
বাষ্পযান = বাষ্প চালিত যান
ভিক্ষান্ন = ভিক্ষা লব্ধ অন্ন
নারীদিবস = নারীদের জন্য দিবস
সিংহদ্বার = সিংহ চিহ্নিত দ্বার
হাতঘড়ি = হাতে পরবার ঘড়ি
গণতন্ত্র = গণের দ্বারা গঠিত যে তন্ত্র
দুধভাত = দুধ মাখা ভাত
জোত্স্না তরাত = জোত্স্না শোভিত রাত
জীবনবীমা = জীবন রক্ষার জন্য বীমা
ধর্মঘট = ধর্ম রক্ষার্থে ঘট
হাতপাখা = হাত দ্বারা চালিত পাখা
আয়কর = আয়ের উপর কর
বটবৃক্ষ = বট নামক বৃক্ষ
একাদশ = একের অধিক দশ
প্রীতিভোজ = প্রীতি উপলক্ষে ভোজ
গোবরগণেশ = গোবরে নির্মিত গণেশ
হাসিমুখ = হাসি মাখা মুখ
রাষ্ট্রনীতি = রাষ্ট্র সম্বন্ধীয় নীতি
চিনিকল = চিনি উত্পাদনের কল
জীবনবীমা = জীবন নাশের অশঙ্কায় যে বিমা
আক্কেলদাঁত = আক্কেলসূচক দাঁত
মোমবাতি = মোম নির্মিত বাতি
ঘোষণাপত্র = ঘোষণা সম্বলিত যে পত্র
ঘিভাত = ঘি মাখা ভাত
৩। উপমান কর্মধারয়ঃ সাধারণ গুণবাচক পদের সাথে উপমানবাচক পদের যে সমাস হয় তাকে উপমান কর্মধারায় সমাস বলে।
উদাহারণঃ
কুন্দশুভ্র = কুন্দের মতো শুভ্র
ফুটিফাটা = ফুটির মতো ফাটা
তুষারশুভ্র = তুষারের ন্যায় শুভ্র
ঘনশ্যাম = ঘনের ন্যায় শ্যাম
বকধার্মিক = বকের ন্যায় ধার্মিক
হরিণচপল = হরিণের ন্যায় চপল
গজমূর্খ = গজের ন্যায় মূর্খ
কুসুমকোমল = কুসুমের ন্যায় কোমল
বিড়ালতপস্বী = বিড়ালের ন্যায় তপস্বী
অরুণরাঙা = অরুণের ন্যায় রাঙা
তুষারধবল = তুষারের ন্যায় ধবল
বজ্রকঠোর = বজ্রের ন্যায় কঠোর
প্রস্তরকঠিন = প্রস্তরের ন্যায় কঠিন
অগ্নিশর্মা = অগ্নির ন্যায় শর্মা
হিমশীতল = হিমের ন্যায় শীতল
মিশকালো = মিশির মত কালো
গোবেচারা = গো-র ন্যায় বেচারা
শশব্যস্ত = শশকের ন্যায় ব্যস্ত
কাজলকালো = কাজলের ন্যায় কালো
৪। উপমিত কর্মধারয় সমাসঃ উপমেয় পদের সঙ্গে উপমানের যে সমাস হয় তাকে উপমিত কর্মধারায় সমাস বলে ।
এক্ষেত্রে সাধারণ গুণের উল্লেখ থাকে না, তা অনুমান করে নেওয়া হয় ।
উদাহারণঃ
পুরুষসিংহ = পুরুষ সিংহের ন্যায়
চরণপদ্ম = চরণ পদ্মের ন্যায়
মুখচন্দ্র = মুখ চন্দ্রের ন্যায়
কথামৃত = কথা অমৃতের ন্যায়
নয়নপদ্ম = নয়ন পদ্মের ন্যায়
করপল্লব = কর পল্লবের ন্যায়
চরণকমল = চরণ কমলের ন্যায়
করকমল = কর কমলের ন্যায়
বীরসিংহ = বীর সিংহের ন্যায়
বাহুলতা = বাহু লতার ন্যায়
নরসিংহ = নর সিংহের ন্যায়
অধরপল্লব = অধর পল্লবের ন্যায়
ফুলকুমারী = কুমারী ফুলের ন্যায়
পাদপদ্ম = পাদ পদ্মের ন্যায়
৫। রূপক কর্মধারায়ঃ উপমান ও উপমেয়র মধ্যে অভিন্নতা কল্পনা করা হলে তাকে রুপক কর্মধারায় সমাস বলে ।
**রূপক কর্মধারায় সমাসের লক্ষণীয় বিষয় - এক্ষেত্রে উপমান ও উপমেয় উভয় পদে সমাস হয় এবং উভয়ের অভেদ কল্পনা করা হয়।
উদাহারণঃ
বিদ্যাধন = বিদ্যা রুপ ধন
চন্দ্রমুখ = চন্দ্র রুপ মুখ
মনমাঝি = মন রুপ মাঝি
বিষাদসিন্ধু = বিষাদ রুপ সিন্ধু
ক্রোধানল = ক্রোধ রুপ অনল
সংসারসাগর = সংসার রূপ সাগর
হৃদয়মন্দির = হৃদয় রূপ মন্দির
আনন্দসাগর = আনন্দ রুপ সাগর
জীবনতরী = জীবন রূপ তরী
জ্ঞানবৃক্ষ = জ্ঞান রূপ বৃক্ষ
জীবনপ্রদীপ = জীবন রূপ প্রদীপ
পরানপাখি = পরান রূপ পাখি
চিত্তচকোর = চিত্ত রূপ চকোর
যৌবনবন = যৌবন রূপ বন
ক্ষুধানল = ক্ষুধা রূপ অনল
শোকসাগর = শোক রূপ সাগর
বিদ্যাসাগর = বিদ্যা রূপ সাগর
শোকানল = শোক রূপ অনল
সুখসাগর = সুখ রূপ সাগর
মোহনিদ্রা = মোহ রূপ নিদ্রা
জীবনস্রোত = জীবন রূপ স্রোত
ভবনদী = ভব রূপ নদী

Post a Comment

0 Comments